রানু ভট্টাচার্য।

অনেক স্বপ্ন সাজিয়ে একটি মেয়ে একজন পুরুষের হাত ধরে সংসারজীবনে প্রবেশ করে। বিয়ের পর একটি মেয়ে যখন শ্বশুর বাড়ি আসে তখন তার কাছে সবথেকে বেশি আপন হয় তার স্বামী। তাকে ঘিরেই তার বেঁচে থাকার ইচ্ছে গড়ে ওঠে। কিন্তু যার বেঁচে থাকার অবলম্বন হওয়ার কথা সে যদি আসে মৃত্যুদূত হয়ে তাহলে কি পরিনতি হয় সেই স্বপ্নের জগতে বিচরণকারী মেয়েগুলোর? আকস্মিক মৃত্যুর অন্ধকারই কি তাদের একমাত্র  নিয়তি! 

মানুষের মতো দেখতে এক পশু ঠিক এমন ভাবেই ঠকাতো অল্প বয়সী মেয়েদের। ভালবাসার অভিনয় মুগ্ধ করত তাদের। চোখে পরিয়ে দিত রঙিন স্বপ্নের কাজল। আর সেই স্বপ্নে বিভোর হয়ে বাবা-মা পরিবার-পরিজন ত্যাগ করে মেয়েগুলো বাড়ি থেকে পালিয়ে আসতো স্বপ্নের পুরুষটি সঙ্গে সংসার বাঁধার বাসনা নিয়ে। শুরুও  হতো সংসার কিন্তু তারপরই এক সপ্তার মধ্যে সেই পছন্দের পুরুষের হাতে খুন হত মেয়েটি।  আর সুযোগ সন্ধানী, স্বার্থলোভী পুরুষটি মেয়েটির সঙ্গে আনা গয়না টাকা-পয়সা লুট করে চম্পট দিতো অন্য শিকারের খোঁজে। বাবা-মা জানতেও পারত না তাদের সন্তান পেয়েছে সংসার নয়,  এক চরম পরিণতি। এদিকে মানুষরূপী পশু চালিয়ে যেত তার হত্যালীলা।  

পশুটির নাম মোহন কুমার ওরফে আনন্দ কুমার।  পেশায় শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক। আর তাই তার পেটানো চেহারা। অসম্ভব সুন্দর কথা বলার ভঙ্গি। কোন রকম নেশা নেই। বয়স পঞ্চাশের কোঠায় তা তাকে দেখে বোঝার উপায় ছিলো না। সেই সুযোগেই সে ফাঁদে ফেলত মেয়েদের আর তারপর ভালোবাসার অমৃত পরিণত হতো বিষে। স্বামীর হাত থেকে সরল বিশ্বাসে তা গলাধঃকরণ করে মেয়েগুলোর তো মৃত্যুর কোলে।  

২০০৫ থেকে ২০০৯ মাত্র চার বছরে কুড়ি জন নারীকে হত্যা করে বিয়ে করে তাদেরকে ভোগ করে তাদের সর্বস্ব লুট করে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সাইনাইড খাইয়ে খুন করে এই মোহন। ২০০৯ সালের অনিমা নামের একটি মেয়ে নিখোঁজ হবার পরই একুশে অক্টোবর পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে। গ্রেপ্তারের সময় তার তিনটি স্ত্রীর খোঁজ পাওয়া যায় তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে। 

 সাইনাইড মোহন! হ্যাঁ এই নামেই পরবর্তীকালে পরিচিত হয়েছিল মোহনকুমার। শিক্ষকের এমন বীভৎস রূপ সত্যি কল্পনাতীত। মানসিক বিকৃতি নাকি ‘লাভ জিহাদ’ কি তাকে ঠেলে দিল এমন নারকীয় অপরাধের সম্মুখে?  তা এখনো অজানা। 

তথ্য়সূত্র-  ট্র ক্রাইম,  তমোঘ্ন নস্কর

 ছবি – বেঙ্গল মিরর