আজ সকালে নন্টে-ফন্টের সঙ্গে কেল্টুর ভাব হয়ে গিয়েছে। হাঁদা-ভোঁদা আজ আর বকুনি খায়নি পিসেমশাই এর কাছে। বাঁটুলের চোখের জলে পাড়া সইতে ঢুবে যাবে এইবেলা! এই ছবি আঁকা হয়েছে বিরাট এক ক্যানভাসে। হাঁদা-ভোঁদা,নন্টে-ফন্টে বা বাঁটুল, এরা কেউ কার্টুন চরিত্র নন। ওদের কাল্পনিক বলে কখনও ভাবেনি বাঙালি। মনে করতে পারেন, ঠিক কতবার আপনি স্কুল থেকে ফেরার পথে আপনার বাবার বা কাকুর হাত ধরে টেনে ইশারা করেছেন, ‘স্টুডেন্টস বুক হাউস’,বা ‘বিদ্যাধরী পুস্তকলয়ের’দিকে। আপনার সঙ্গের দাদা, কাকু বা আপনার আত্মীয়টি আপনাকে বলেছেন,‘‘এই তো গত সপ্তাহেই কিনলি…ওটা শেষ করেছিস!’’ তার পর আবার হাসি মুখে সেই দোকানেই নিয়ে গিয়েছেন। দোকানি কাকুও আপনার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত আন্তরিকতায় আপনার হাতের কাছে নামিয়ে আনছেন ওদের! আপনি নেড়েচেড়ে বেছে নিচ্ছেন আনন্দ। কিংবা ধরুন, সে বছর আপনি হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষার পর পুজোর শপিং-এ গিয়েছেন। ফেরার সময়ে হাতে করে ফিরছেন বাঁটুল সমগ্র। ফেলুদার বয়স আটাশের বেশি হবে না কোনওদিন। ব্যোমকেশ যেমন চিরদিন একই রকম,উত্তমকুমার চিরকালীন ম্যাটিনি আইডল, কিংবা টম অ্যান্ড জেরি যেমন চিরনতুন, ঠিক তেমনই যেন দেশ কাল সময়ের সীমানা অতিক্রম ক’রে বাঙালি নামক এই ভালবাসার সম্প্রদায়কে মোহিত করে রেখেছে তাঁর সব সৃষ্টি।
এই সবই ক্যানভাসে আঁকা এক একটি চিত্রকল্প। এই সমস্ত চিত্রকল্পের রামধনু রঙে অমলিন আপনার আমার আমাদের সবার শৈশব-আবেগ। এই সমস্ত ক্যানভাসে সদা চঞ্চলিত ছোটবেলা। বিশ্বাস করুন আপনার শিশু বা কিশোর পুত্র বা কন্যার টেবিলে কদাচ যদি ওদের দেখা পান,ওরা আপনার সঙ্গে কী সুন্দর করে কথা বলে ওঠে আবারও। সেই একই টান,একই ভালবাসা আর একই বেস্ট ফ্রেন্ডের ফ্লেভার ফিরে পান না আপনি বা আমরা সবাই? ছোটবেলায় শীতের ছুটিতে রোদে পিঠ দিয়ে কত গল্প জুড়তেন ওদের সঙ্গে! সে সব কিছু বারবার ফিরে ফিরে আসে না? আসবেই তো। আসতেই হবে। বাঁটুল,হাঁদা-ভোঁদা,নন্টে-ফন্টে এরা যে বড় আপনার জন।
ভাবলে বিস্মিত হতে হয় সৃষ্টিকর্তা যখন তাঁর সৃষ্টির নামে পরিচিতি পান,খ্যাতি পান,জ্যোতি পান,পান আলোকময় আভা তখনই সেই সৃষ্টি এবং সৃষ্টিকর্তা পৌঁছে যান কিংবদন্তির পর্যায়ে।এও এক বিস্ময়! সাতানব্বই বছর বয়স পর্যন্ত যে জাদুকর কোনও এক মন্ত্রপূত তুলির আঁচরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিল ম্যাজিক, সেই জাদুকর আজ মঞ্চ থেকে বিদায় নিলেন। কিন্তু ওরা থাকবে। Show must go on…..