গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|

আগ্নেয়গিরির কথা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কালো ধোঁয়া, লাল আকাশ, তরল লাভা এবং আতংক। আজ আমরা আলোচনা করব বিশ্বের এমনই কিছু আগ্নেয়গিরি সম্পর্কে যার ভয়াবহতা জেনে শিউড়ে উঠবেন আপনিও।

তামু ম্যাসিফ (Tamu Massif)

তামু ম্যাসিফ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি। জাপানের উপকূলীয় এলাকার কাছে সমুদ্রগর্ভে অবস্থিত তামু ম্যাসিফ আগ্নেয়গিরিটির খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল দুই দশক আগে। এটিই যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি তখন কেউ তা বুঝতে পারেনি। তবে বিজ্ঞানীরা কয়েক বছর ধৈর্য ধরে তথ্য সংগ্রহ করার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি। এটি আকৃতির দিক থেকে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ অথবা নিউ মেক্সিকো এর পুরোটার চাইতেও বড়। তামু ম্যাসিফ হলো ৪০০ মাইল দীর্ঘ এবং ২.৫ মাইল উঁচু। এই আগ্নেয়গিরির শীর্ষ অবস্থিত সমুদ্রতলের ৬,৫০০ ফুট নিচে। যদি এই আগ্নেয়গিরির কখনোবিশাল বিস্ফোরণ ঘটে তবে কি হতে পারে কেউ কি অনুমান করতে পারছেন?

বানুয়া উহু (banua wuhu)

বানুয়া উহু হলো অপর আর একটি ভয়ংকর আগ্নেয়গিরির নাম। ইন্দোনেশিয়ার শাঙ্গি দ্বীপের সমুদ্র তল থেকে ৪০০ মিটারেরও বেশি ওপরে উঠা সমুদ্র গর্ভস্থ আগ্নেয়গিরি হলো বানুয়া উহু। আপনি যদি কখনো এই দ্বীপটি দেখতে যেতে চান তবে অবশ্যই আপনার একজন গাইড বা পথপ্রদর্শক লাগবে। এই আগ্নেয়গিরিটি সম্পূর্ণ সমুদ্র তলদেশে, যার জন্য আপনি সমুদ্রের বাইরে বা পাড়ে দাঁড়িয়ে কখনই কিছু দেখতে পারবেন না। ইতিহাসের রেকর্ড অনুযায়ী বানুয়া উহু আগ্নেয়গিরি কয়েকটি ক্ষুদ্রতর অল্প ক্ষণস্থায়ী দ্বীপ সৃষ্টি করেছিল এবং তা একসময় অদৃশ্যও হয়ে গিয়েছিল। ১৮৩৫ সালে ৯০ মিটার উচ্চতার একটি দ্বীপ সৃষ্টি হয়েছিল, কিন্তু ১৮৪৮ সালে এটি কেবল কয়েকটি শিলাতে পরিণত হয়। জনশ্রুতি অনুযায়ী ১৮৮৯ সালে নতুন আর একটি দ্বীপ গঠিত হয় এবং এটি ১৮৯৪ সালে ৫০ মিটার উচ্চতায় পৌছায়। ১৯১৯ সালে অপর আর একটি দ্বীপের দেখা মেলে তবে ১৯৩৫ সালে এটিও আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। বানুয়া উহুর মতো এতো মারাত্মক ভয়ংকর আগ্নেয়গিরি পৃথিবীর আর কোথাও দেখতে পাবেন না।

আনাক ক্র্যাকেটোয়া (anak krakatoa)

১৮৮৩ সালের আগস্টে ইন্দোনেশিয়ার এই দ্বীপে অগ্নুৎপাত ঘটে। আনাক ক্র্যাকেটোয়া সবচেয়ে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরির মধ্যে একটি। এপর্যন্ত পৃথিবীতে অগ্নুৎপাত হওয়া আগ্নেয়গিরির মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ও বিকট আওয়াজ করা আগ্নেয়গিরি হল এটি। অগ্নুৎপাতের সময় এর তেজি আওয়াজ এতটায় প্রখর, যেন পুরো পৃথিবীর মানুষ আওয়াজটি শুনতে পেয়েছিল। বিজ্ঞানীরা ধারণা করে বলেন যে, এই অগ্নুৎপাতের তেজ ছিল ২০০ মেগাটন বারুদ বিস্ফোরণের সমতুল্য- যা ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার শক্তির তুলনায় ১৩,০০০ গুণ বেশি। এই অগ্নুৎপাতের পরের বছর বিশ্বের তাপমাত্রা প্রায় ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গিয়েছিল।

এন্টার্কটিকায় আরও ৯১ আগ্নেয়গিরি

আগস্ট ২০১৭ তে বিজ্ঞানীরা একসাথে ৯১টি আগ্নেয়গিরির সন্ধান পেয়েছেন পশ্চিম এন্টার্কটিকায়। তবে বিজ্ঞানীরা খানিকটা যেন ভয়ে ভয়ে ছিলেন। যদি কখনো এই আগ্নেয়গিরিগুলা অগ্নুৎপাত শুরু করে তাহলে আমাদের আর রক্ষা কোথায়! বরফের স্তরে একে একে নামতে থাকবে ধস। যার পরিণতিতে পৃথিবীর একটি বিশাল অংশ পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। তবে আশার কথা হচ্ছে প্রায় চার কিলোমিটার পুরু বরফের নিচে রয়েছে এগুলো। বরফের পুরু চাদরে চাপা থাকায় আগ্নেয়গিরিগুলোর প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রয়েছে। যার ফলে অগ্নুৎপাত ঘটার আশংকা খুবই কম। আগ্নেয়গিরিগুলো বর্তমানে সুপ্ত অবস্থায় আছে। আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টির উচ্চতা প্রায় ৪০০০ মিটার, যা উচ্চতায় সুইজারল্যান্ডের ইগার আগ্নেয়গিরির সমান। আগ্নেয়গিরিগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০-৪০০ মিটার পর্যন্ত।