গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক।
ভ্যালেন্টাইন্স ডে হল আপামোর প্রেমবিলাসী মানুষের কাছে এক বিশেষ দিন, নির্ভেজাল এক প্রেমের দিন। তবে প্রেমের জন্য নির্দিষ্ট দিন বরাদ্দ রাখা হলেও ভালবাসার জন্য যে আলাদা করে কোনও দিনক্ষণ ঠিক করা যায় না, একথা সকলেই জানেন। তবে ক্যালেন্ডারে ১৪ ফেব্রুয়ারি এলেই মন বলে মনের মানুষটিকে নিয়ে একটু বেড়িয়ে আসি। তবে প্রেম করার প্রসঙ্গ এলেই রবীন্দ্র সরোবর, ভিক্টোরয়া বা ময়দানের কথা মনে আসে। কিন্তু এই শহর কলকাতায় রয়েছে এমন কিছু জায়গা যেখান প্রেমিকাকে নিয়ে কাটয়ে দিতে পারেন সুন্দর মুহূর্ত। দেখে নিন সেগুলি কী কী-
১)রুফ টপ ক্যাফে- সঙ্গীর হাত ধরে মাটি থেকে অনেক উঁচুতে অথচ খোলা আকাশের কাছাকাছি যদি পৌঁছে যেতে ইচ্ছা হয়, তাহলে বেছে নিন এই শহর কলকাতার বুকে অবস্থিত যে-কোনও একটি রুফ টপ কাফেতে। সঙ্গীর হাতে হাত রেখে কফি কাপে চুমক দিতে দিতে কাটিয়ে দিতে পারেন একটা গোটা বিকেল।বা একে অপরের কাঁধে মাথা রেখে দেখতে পারেন সূর্যাস্তও। কলকাতা শহরে রুফটপ কাফের মধ্যে ওজোরা, ওয়াটসআপ কাফে, স্মোক শেক, জুকা লাউঞ্জ, দ্য রুফটপ কাফে, ওটিটি ওভার দ্য টপ ইত্যাদি নানা অপশন রয়েছে আপনার হাতের মুঠোয়।
২) স্মরণিকা ট্রাম মিউজিয়াম- একে অপরের দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দিতে পারেন ঝাড়া এক ঘণ্টা? তাহলে ধর্মতলা ধর্মতলা সিটিসি কমপাউন্ডের কাছে অবস্থিত স্মরণিকা ট্রাম মিউজিয়াম হতে পারে আপনাদের জন্য আদর্শ জায়গা। কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যপূর্ণ এই ট্রামের বিবর্তনের ইতিহাস ধরা পড়েছে এই মিউজিয়ামে। একেবারে ট্রামের আদলে গড়ে দু’কামড়ার এই মিউজিয়ামের একটি কামড়ায় রয়েছে এই মিউজিয়াম। তবে নাম মিউজিয়াম হলেও আর একটি কামড়ায় রয়েছে কপি শপ। চা-কফি পান বা ঠান্ডা পানীয়ে গলা ভেজানোরও বন্দোবস্ত রয়েছে এখানে। পেয়ে যাবেন চিপসও। মিউজিয়ামের টিকিট মূল্য ১০ টাকা। দুপুর ৩টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা। সকলের জন্য এক ঘণ্টা করে সময় এখানে বরাদ্দ।
৩) মল্লিকঘাট ফুলের বাজার- একটা রোমান্টিক সন্ধেবেলা আরও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে মল্লিকঘাট ফুলের বাজারে। অনেকেই হয়তো জানেন না যে এটাই হল এদেশের সবথেকে বড় ফুলের বাজার। সবথেকে ভাল হয় ভালবাসাকে যদি ফ্রেমবন্দি করে রাখার সুযোগ পাওয়া যায়। অর্থাত পরিচিত কোনও ফটোগ্রাফার বন্ধুকে যদি নিয়ে যেতে পারেন তাহলে সে আপনার এবং আপনার সঙ্গীর রোমান্টিক মুহূর্তগুলিকে ক্যামেরাবন্দি করে দিতে পারবে।
এর পাশেই রয়েছে গঙ্গার ঘাট। সেখান থেকে এক নয়া আঙ্গিকে ধরা দেবে হাওড়া ব্রিজ। আর খুব ভাল হয় যদি ভোরের দিকে এখানে আসতে পারেন। ভোরে গঙ্গার ঘাটের প্রাকৃতিক শোভা এক কথায় অমূল্য।
৪) গঙ্গার বুকে নৌকাবিহার- মিলেনিয়াম পার্ক কলকাতায় গঙ্গা নদীর পূর্ব তীরে রেলওয়ে ক্লাবের বিপরীতে ও ফেয়ারলি ঘাট থেকে ২.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিলেনিয়াম পার্কে সারা বছরই মানুষের ভিড় জমে। তবে প্রেমের দিনটিকে স্মরণীয় করে তুলতে গঙ্গার বুকে হতে পারে নৌকোবিহার। টিকিট কেটে সওয়ার হোন ময়ুরপঙ্খী নৌকোয় (আদতে লঞ্চ)। নৌকোর মধ্যেই লাইভ মিউজিকের বন্দোবস্তও রয়েছে। তবে যদি নৌকোর মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া সেরে ফেলতে চান। তারও ব্যবস্থাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে টিকিটের মূল্য হবে কিছু বেশি। তবে নৌকোয় সওয়ারির জন্য প্রিন্সেপ ঘাট আদর্শ। সেখানে দুজনের জন্য নৌকো বুক করে সওয়ার হতে পারেন সহজেই। কাটাতে পারেন একটা সুন্দর বিকেল।
৫) মার্বেল প্যালেস- কলকাতা শহরের একটি দর্শনীয় স্থান হল মার্বেল প্যালেস। বিভিন্ন শিল্পীর ভাস্কর্য সমৃদ্ধ এক অসাধারণ সংগ্রহশালা হল এই মার্বেল প্যালেস। ৪৬ মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে অবস্থিত এই প্রাসাদ বাবু রাজেন্দ্রনাথ মল্লিক বাহাদুরের (১৮১৯-৮৭ খ্রিস্টাব্দ) তৈরি। রাজা রাজেন্দ্রলাল মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৮৩৫ সালে তিনি এক ফরাসি স্থপতিকে দিয়ে এই মার্বেল প্যালেস-এর নির্মাণকাজ শুরু করেন। যা শেষ হতে সময় লাগে ৫ বছর।
উনবিংশ শতকে নির্মিত উত্তর কলকাতার প্রাসাদগুলির মধ্যে সৌন্দর্যের বিচারে সেরা জায়গা হল এই মার্বেল প্যালেস। এই ভবনটির ভিতরে রয়েছে অসংখ্য শিল্পীদের সব ভাস্কর্য। বিশেষত, গ্রিক ও রোমান পৌরাণিক দেবদেবী জিউস, মিনার্ভা, মার্কারি, অ্যাপোলো, হেরা, ভেনাস, কিউপিড- সকলের শ্বেত পাথরের মূর্তি যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ভাস্কর্যের পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য চিত্রকর্মও। এর বাগানে এখনও একটি ছোট্ট চিড়িয়াখানা রয়েছে। যেখানে দশর্করা দেখতে পাবেন ময়ূর, পেলিক্যান পাখি, সারস, বিভিন্ন প্রজাতির বক, বিভিন্ন প্রজাতির বুনো হাঁস, হাড়গিলে পাখি, বানর, সজারু, চিতা, বনবিড়াল, গন্ধগোকুল। উত্তর কলকাতার এই মার্বেল প্যালেস অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর বাবু-সংস্কৃতি ও বিলাস বৈভবের কথা মনে করিয়ে দেয়। এমন স্থাপত্য চাক্ষউস করলে মনটা এমনিতেই রোমান্টিক হয়ে উঠবে। তাই সঙ্গীকে নিয়ে ঘুরে আসতেই পারেন মার্বেল প্যালেস থেকে।
কমেন্টস
Khub valo laglo pore , thank u for thos information