“পাঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মারাঠা”— আজ থেকে ৭৫ বছর আগেই এই সিন্ধু প্রদেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে। তাহলে আজও ভারতের জাতীয় সঙ্গীতে ‘সিন্ধু’ কেন? আইন অনুযায়ী, কোনও নির্দিষ্ট কারণ উপস্থিত হলে ভারত সরকার এই গানের কথায় যেকোনও পরিবর্তন আনতে পারেন। তবে?
ভারতের জাতীয় সংগীত নিয়ে বহুবার দানা বেঁধেছে এমন নানান বিতর্ক। আজকে আমরা যে ‘জনগণমন’-কে জাতীয় সঙ্গীত বা রাষ্ট্রগান বলে জানি, ১৯১১ সালে রচিত এই রবীন্দ্রসঙ্গীত তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রথম যখন প্রকাশ পায় তখন তার নাম ছিল ‘ভারত-বিধাতা’; এবং সেই সময় গানটিকে ‘ব্রহ্ম সঙ্গীত’ আখ্যা দেওয়া হয়।
১৯১১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে গানটি প্রথম গাওয়া হয়। কাকতালীয়ভাবে সেই সময়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সম্রাট, পঞ্চম জর্জ কলকাতায় উপস্থিত ছিলেন; তাঁকে সসম্মানে স্বাগত জানাতে সেদিন একটি হিন্দি গান পরিবেশিত হয় ওই অনুষ্ঠানে— আর সেখানেই সূত্রপাত হয় এক মহা-ভ্রান্তির। সংবাদমাধ্যমের ভুলে এই খবর চাউর হয়ে যায় যে, ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ আসলে রাজপ্রশস্তি সঙ্গীত হিসেবে রচনা করেছেন রবি ঠাকুর— যা একেবারেই সত্য নয়।
ক্রমে এই জাতীয় সঙ্গীত ঘিরে আরও অনেক ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করে তৎকালীন সংবাদপত্রগুলি; যেমন— ‘বন্দে মাতরম’ রবি ঠাকুরের রচিত, ‘জনগণমন’ একটি হিন্দি গান ইত্যাদি।
এরপর ২০০৫ সালে অর্থাৎ স্বাধীনতার প্রায় ৫৮ বছর পর, এই গানে ব্যবহৃত ‘সিন্ধু’ শব্দটির পরিবর্তে ‘কাশ্মীর’ শব্দটি যোজনা করার দাবি ওঠে। দাবিদারদের যুক্তি— ১৯৪৭ সালের পর ‘সিন্ধু প্রদেশ’ সম্পূর্ণ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের পালটা যুক্তি অনুযায়ী ‘সিন্ধু’ শব্দটি শুধুমাত্র সিন্ধু প্রদেশ নয়, সিন্ধু নদ ও ভারতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ সিন্ধি ভাষা ও সংস্কৃতির পরিচায়ক। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এই দ্বিতীয় যুক্তিকে মান্যতা দেয়, এবং জাতীয় সঙ্গীতের ভাষায় পরিবর্তনের বিপক্ষে রায় দেয়। তাই ‘কাশ্মীর’ নয়— সিন্ধুই থাকবে, ভারতের… ভারতীয়দের। রবি ঠাকুর আরও একবার শিখিয়ে দিলেন— দেশ ভাগ হলেও আমাদের শিকড়ের সংস্কৃতি ও চেতনা থেকে আমরা যেন কখনও বিচ্ছিন্ন না হই।