গল্প কুটির ওয়েব ডেস্ক|
কালকাসুন্দা, কাসমর্দ, কালকাসুন্দি, কালকেসেন্দা। সংস্কৃত নাম কাশমার এর বৈজ্ঞানিক নাম Cassia sophera। বর্ষাকালে গ্রামবাংলার পতিত জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কালকাসুন্দার গাছ জন্মে । এর ফুল হলুদ রঙের এবং এতে মটরশুটির মত গুটি হয় । এটি শুকিয়ে গেলে এর বীজ বের হয় । এর পত্র বৃন্তে চার থেকে ছয় জোড়া পাতা হয়। পাতা হাতে নিলে একধরনের গন্ধ পাওয়া যায়। এদের ফুল হলুদ আর ফল চ্যাপ্টা হয়। এই গাছের ফল লম্বাটে শুঁটি। গাছ ৭ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।কাণ্ডের রং গাঢ় সবুজ। বেশ শক্ত। সাধারণত বর্ষা থেকে শরৎকালের মধ্যে এই গাছ জন্মায়। আর শীতের শেষ পর্যন্ত বাড়তে থাকে।
জন্মস্থানঃ
বাংলাদেশ ও হিমালয় থেকে সিংহল পর্যন্ত এবং ভারতের পশ্চিমাঞ্চল থেকে মায়ানমার পর্যন্ত এই গাছ প্রচুর দেখা যায়। প্রাচীনকাল থেকে এই গাছের ডালপালা ও পাতা থেকে নানা রকম ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
যে সকল রােগের উপশম হয়ঃ
গাছের পাতা ও মূল ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সংস্কৃত লেখকদের মতে ছােট কালকেসেন্দার যে গুণ আছে বড় কালকেসেন্দার সেই গুণ বর্তমান।
১. রক্ত দোষ হলে ও এক ভােলা পরিমাণ কালকাসুন্দা পাতার রস । মিছরি চূর্ণ সহ সকালে নিয়মিত সেবন করলে রক্তদোষ দূর হয় ।
২. কাশি হিক্কাযুক্ত শ্বাস এবং স্বরভঙ্গ হলে এক ভােলা পরিমাণ কালকাসুন্দা পাতার রস আধা সের পানি সহ আগুনে সেদ্ধ করে আধা পােয়া থাকতে নামিয়ে নিতে হবে তারপর ছেকে নিয়ে সেবন করলে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়
৩. পিত্তদোষ হলে এক তােলা পরিমাণ কালকাসুন্দে পাতার রস মধুসহ নিয়মিত সেবন করলে উপকার পাওয়া যাবে ।
৪. কোষ্ঠবদ্ধতায় এক ভােলা কালকাসুন্দে পাতার রস গরম পানি যােগে নিয়মিত সেবন করলে কোষ্ঠবদ্ধতা সারে ।
৫.কালকাসুন্দার পাতা সেদ্ধ করে ঘিয়ে ভেজে শাকের মত রান্না করে খেলে অরুচিতে রুচি আনে।
৬.তারকা রোগ হলে কালকাসুন্দার পাতা বেটে দুধের সাথে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৭. কালকাসুন্দার বীজ চূর্ণ করে শিশুদের খাওয়ালে দাস্ত বন্ধ হয়ে যায়।
৮. বিছা কামড়ালে কালকাসুন্দার পাতা নল বানিয়ে ফুঁ দিলে বিছার কামড়ের যন্ত্রণা দূর হয়।
৯. কালকাসুন্দার পাতা গাওয়া ঘিয়ের সঙ্গে বেটে নিয়ে তার ওপর প্রলেপ দিলে গোদ রোগ ভালো হয়।
১০. কালকাসুন্দার পাতা বেটে ফোঁড়ায় ও দাদে প্রলেপ দিলে ফোঁড়ার যন্ত্রণা কমে ও দাদ
ভালো হয়ে যায়।
১১.কালকাসুন্দের ফুলচূর্ণ করে প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে পানিসহ খেলে অম্বলজনিত গলা ও বুক জ্বালা রোগ সেরে যায়।
১২. যদি হঠাৎ কেউ অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে কালকাসুন্দের পাতার রস এক চামচ খাইয়ে দিতে হয় এবং সেই সঙ্গে দু-ফোঁটা রস নাকে ঢেলে দিলে উপকার পাওয়া যায়।
১৩. কালকাসুন্দের শিকড়ের ছাল বেটে পানি দিয়ে খেলে হাঁপানি রোগ ভালো হয়।
১৪. অরুচির ক্ষেত্রে থাকে পিত্ত শ্লেষ্মারদো ষ, তার প্রধান লক্ষণ থাকবে জিভটা ফাটা ফাটা এবং জিভের ধারটালাল; কিছু খেলেই জ্বালা করে আর মুখে কিছুতেই যেন রুচি হয় না; এক্ষেত্রে কালো বা সাদা কাসুন্দের পাতা অল্প লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে তবে জল ফেলার দরকার নেই; তা ঘিয়ে সাঁতলে ৮ থেকে ১০ গ্রাম আন্দাজ শাকের মতো ভাতের সঙ্গে খেলে ২ থেকে ৩ দিনেই অরুচিটা সেরে যাবে কিন্তু বেশি খেলে পেটে বায়ু হওয়ার ভয় থাকে, সুতরাং অল্পখা ওয়াই ভালো।
১৫. যে গলা ভাঙ্গায় মাঝে মাঝে ফাটা কাঁসির মতো সবার বেরোয়, আবার একদম বসে যায়, সেক্ষেত্রে বুঝতে হবে এটাতে কফের সঙ্গে পিত্তেরও যোগ আছে; এক্ষেত্রে এর পাতা ও ফুল দুটোয় মিলিয়ে ১০ গ্রাম আর শুষ্ক হলে ৩ গ্রাম ৪ কাপ জলে সিদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে, ছেঁকে প্রত্যহ সকালে ও বিকালে অধোকটা করে দুইবারে সমস্তটা খেতে হবে। তবে এর সঙ্গে এক চা চামচ করে মধু মিশিয়ে খেলে ভালো হয়।
১৬. এদের দাস্ত বারে বারে হবে, গন্ধ বিশেষ নেই, রংও হলুদ, নোনতা জিনিস খাওয়ার ঝোঁক বেশি,এক্ষেত্রে কালো কাসুন্দের পাতার রস এক চা চামচ একটু গরম করে খেতে দিলে ওটা সেরে যাবে। তবে সাবধানে না থাকলে আবার আসবে।
১৭. ঘুস ঘুসে জ্বর হলেও খাওয়ায় অরুচি নেই, আর জ্বর আসার এবং সময়েরও ঠিক নেই, আস্তে আস্তে হাত পা সরু হতে থাকে; পেটটাও বড় হয়, শিরা বেরোয়, গুঠলে মল,
আয়না পেলেই তাঁরা দাঁতের ময়লা আর দাঁতের ফাঁক দেখে;এদের এই ঘুসঘুসে জ্বরে কালোকাসুন্দের শিকড়ের ছালকে বেটে, মটরের মতো বড়ি করে রাখতে হবে।
প্রতিদিন পানি দিয়ে সকাল ও বিকাল খেতে হবে।
১৮. শরীরে লাল চাকা চাকা হয়ে ফুলে ওঠে, এক্ষেত্রে কালোকাসুন্দের পাতার রস করে গায়ে মাখলে ওটা সেরে যায়, এমন কি ছোটখাটা দাদও সেরে।
তথ্যসূত্রঃ অনলাইন মিডিয়া ব্লগ