ঈশ্বর আছেন কি নেই এই নিয়ে তর্ক চলবে, চলে আসছে আস্তিক ও নাস্তিকে। তবে ভারতবর্ষের প্রত্যেকে মন থেকে বিলক্ষণ জানেন, মা সরস্বতী আছেন। নির্ঘাত আছেন। আছেন তাঁর বরকন্যা লতা মঙ্গেশকর। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ভাষা-সংস্কৃতির ঊর্ধ্বে গিয়ে যে কন্ঠ সুরের কোমল সুতোয় বেঁধে রেখেছেন এই ভারতের সকল মন। আজ এই বিশ্বে ইন্টারনেট মারফত সর্বাধিক যে মানুষটির সম্পর্কে খোঁজ করা হবে, তিনি লতা মঙ্গেশকর। আজ ভারতবর্ষের আত্মীয় বিয়োগ হয়েছে।

আজ থেকে বিরানব্বই বছর আগে ইন্দোরে পন্ডিত দীনানাথ ও তাঁর স্ত্রী শিবান্তি মঙ্গেশকরের কোল আলো করে এক প্রতিভাস জ্যোতিষ্ক নেমে এসেছিল এই গ্রহে। পরবর্তীতেও তাঁরই নামে গর্বিত হবে এই উপমহাদেশ। তাঁরই সুরে মোহিত হবেন আসমুদ্রহিমাচলের প্রেম, ভালবাসা, বিচ্ছেদ, শোক এবং সুখ!

আজ সরস্বতী পুজোর বিসর্জন। এক ঐশ্বরিক সমাপতনে যেন চলে গেলেন মায়ের আশীর্বাদ-ধন্যা প্রতিভা লতা! আজও হয়তো পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেলে বাজছে ‘সাত ভাই চম্পা!’ কিংবা ‘আজ ফির জিনে কি তামান্না হ্যায়, আজ ফির মরনে কি ইরাদা হ্যায়!’ ভারতবাসী লতা মঙ্গেশকরকে শুধুমাত্র শিল্পী বলেই মনে করেন না। লতা নিজেই একজন ঈশ্বর সৃষ্ট শিল্প। তিনি ভারতীয় সঙ্গীত সংস্কৃতির ধারক-বাহক নন; লতা নিজেই এক সংস্কৃতি যা এক নদী খাতের মতোই বয়ে নিয়ে চলেছেন একটি নদী, যার নাম সুর।

 কয়েক হাজার হিন্দি গান গেয়েছেন লতা মঙ্গেশকর। প্রায় সবকটি প্রচলিত মূল ধারার ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। ভারতরত্ন ছাড়াও পেয়েছেন ফ্রান্সের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান। বলা যায়, অজস্র পুরস্কার এবং সম্মান নিজেই সম্মানিত হয়েছে লতা মঙ্গেশকরের করতলে আশ্রয় পেয়ে।

খুব জানতে ইচ্ছে হয়, পাঁচ ফুট বরফের আস্তরণের নিচে কর্তব্যরত যে সৈনিক কেঁদেছিলেন- ‘অ্যায় মেরে বতন কি লোগো’ শুনে, তিনি আজ কী ভাবছেন? এ যে শোকের চেয়েও কিছু বেশি শোক। আজ যেন ভারতের মাতৃবিয়োগ হয়েছে। আজ অশীতিপর বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা থেকে আজকের প্রজন্ম, সকলেই যেন নিজের নিজের সময়কে আবারও একবার সুরের আলোয় খুঁজতে থাকবেন! আজ আরও একবার হারিয়ে যাবেন নিজের নিজের প্রেমে। আরেকবারটি সবাই মনের পরতে পরতে অনুভব করবেন ফেলে আসা সমীরণের ছোঁয়াচ, ‘ইয়ে কাহা আ গয়ে হাম!’

লতা মঙ্গেশকর সঙ্গীতের নাম। লতা সুরেরই নাম। লতা কন্ঠেরও নাম। লতা হলেন ঈশ্বরকন্যা-এ সকলেরই জানা। তবে লতা মঙ্গেশকর যে অমর তা কি সকলে জানত! আগামী কয়েকশো বছর বা কয়েকশো শতাব্দী জুড়ে যে মূর্ছনায় ভাসতে থাকবে এই ভারতের প্রাণ, তার নাম লতা মঙ্গেশকর। ঠিকই তো, ‘জিন্দেগি প্যায়ার কা গীত হ্যায়, ইসে হার দিল কো গানা পডেগা!’

লতা মঙ্গেশকর অমর তাঁর গানে, সুরে এবং কন্ঠে

‘So long as eyes can breathe or eyes can see

so long lives this, and this gives life to thee!’