ক্যালকাটা ক্রিকেট অ্যান্ড ফুটবল ক্লাবের (CC&FC) উদ্যোগে সম্প্রতি আয়োজিত হল প্রেসিডেন্ট বনাম ভাইস প্রেসিডেন্ট রাগবি টুর্নামেন্ট। ক্লাবের জার্সিতে নজর কাড়লেন প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী। উইঙ্গার হিসেবে প্রায় ৭ বছর ধরে রাগবি খেলছেন প্রিয়াঙ্কা। ছত্রিশ বর্ষীয় এই ক্রীড়াবিদের চোদ্দ বছরের এক কন্যা সন্তানও রয়েছে। সর্বভারতীয় খেলাধুলোর স্তরে বাংলার মেয়েদের পৌঁছে দেওয়াই এই মুহূর্তে প্রিয়াঙ্কার একমাত্র লক্ষ। বিশেষত ভারতে যেখানে রাগবি, সুইমিং, হর্স রাইডিং-এর মতো খেলার চর্চা কর্ম, সেখানে এগুলির প্রসার ঘটানোর জন্য রাত-দিনব্যাপী খাটনি জারি রেখেছেন প্রিয়াঙ্কা।

একাধারে উদ্যোগপতি এবং অন্যদিকে ক্রীড়াবিদ প্রিয়াঙ্কা জানান, মাতৃত্বের কর্তব্য পালনের সঙ্গে সঙ্গে এই লড়াইটা নেহাত সহজ হয় না। তবে তিনি হাল ছাড়তে নারাজ। গতানুগতিক জীবন ছকের বাইরেও যারা খেলা নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়তে চান, প্রিয়াঙ্কা সেই সকল মেয়েদের সঙ্গ দিতে সদা প্রস্তুত। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি একটি কমিউনিটি গঠন করে ফেলেছেন। সেখানে পশ্চিমবাংলা এমনকী দেশের যে কোনও অংশ থেকেই তরুণ খেলোয়াড়রা তাঁর সাহায্য পেতে পারেন।  

খেলোয়াড়ি জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে এগোতে হয়েছে প্রিয়াঙ্কাকে। সব সামলে পরিবারকে সময় দিয়েছেন, যুগ্ম কর্ণধার হিসেবে যুক্ত হয়েছেন দুটি বাণিজ্যিক সংস্থার সঙ্গেও। তাঁর কথায়, ” বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত থাকলেও রাগবির প্রতি আমার অপরিসীম ভালবাসা। এক সময়ে পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছিলাম। তবে ধীরে ধীরে মাঠে ফিরি। সম্প্রতি  ভালো পারফর্ম করতে পেরেও ভালো লাগছে। তবে এই লড়াই কেবল নিজের জন্য নয়, আগামী প্রজন্মকে খেলাধুলোর গুরুত্ব বোঝানোর জন্য।” তিনি আরও যোগ করেন, ”পুরুষতান্ত্রিক সমাজে অনেকেই মেয়েদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাগুলিকে  সহজভাবে নেন না। আমাকেই কতবার প্রশ্ন করা হয়েছে যে মেয়ে হয়ে আমি রাগবি খেলি কীভাবে, তাঁর উপর মা হয়ে যাওয়ার পরে অনেক ঘেরাটোপ চলে আসে। সেই সব শৃঙ্খল ভেঙে আমাদের মেয়েদের অনেকদূর এগোতে হবে।”

প্রসঙ্গত, ১৭৯২ সালে ব্রিটিশ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ক্লাবের নাম বদলে ক্যালকাটা ক্রিকেট অ্যান্ড ফুটবল ক্লাব (সংক্ষেপে সিসিঅ্যান্ডএফসি)। এই ঐতিহ্যশালী ক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য প্রিয়াঙ্কা। ক্লাবে রাগবির পাশাপাশি হকি, সাঁতার ও টেনিস-এর মতো খেলাগুলির প্রতিও যাতে আগামী প্রজন্ম উৎসাহ পায়, সেইদিকে তাঁর চেষ্টা জারি রয়েছে।