অফিস থেকে ফেরার পথে সবুজপল্লী বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন পাঁচটা কুড়ির বাস ধরে মানব। বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ধরলে সিট নিয়ে বসে যাওয়া যায় বলে; টোটো গাড়ি করে চাঁপাডালির মোড় থেকে এখানে চলে আসে ও। তবে অন্য দিনের চেয়ে আজ একটু দেরিতে আসায় বাসে উঠে মানব দেখল, কয়েকটা লেডিস সিট ফাঁকা থাকলেও জেনারেল সিটের মধ্যে আর মাত্র একটা সিটই ফাঁকা আছে। আজ আর তনিমার পাশে বসে গল্প করতে করতে বাড়ি ফেরা হবে না বলে বড্ড আপশোস হচ্ছিল ওর।
তবু কুড়ি কিলোমিটার রাস্তা অন্তত বসে আসতে পারবে বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করল মানব। তাড়াতাড়ি করে সিটটাতে বসে পড়তেই জানালার ধারে বসে থাকা অপর নিত্যযাত্রী বললেন, “ঠেলছেন কেন? ভদ্রভাবে বসুন। ঠেলে বসা দেখছি আপনার অভ্যাস হয়ে গেছে।” এমন অদ্ভুত কথা শুনে একটু বিরক্তই হল মানব।
সহযাত্রীটির চোখে চোখ রেখে বলল, “দেখুন, ঠেলাঠেলি করা আপনার অভ্যাস হতে পারে, আমার নয়। ডেইলি প্যাসেঞ্জার হিসাবে যারা যাতায়াত করে তারা সবাই জানে।”
ভদ্রলোক উত্তেজিত হয়ে বললেন, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমার জানা আছে। আপনি যে রোজ একজন বিবাহিতা মহিলার গায়ে লেপ্টে যাতায়াত করেন সেটা সবাই দেখে। আপনি মশাই বড় বড় কথা বলবেন না তো।”
মানবও সুর চড়িয়ে বলল, “ও-ও-ও, এবার বুঝতে পারছি আপনার এত রাগের কারণ কী। দেখুন, আমি এতদিন ধরে যাতায়াত করছি, কেউ আমাকে এত বড় কথা বলতে পারেনি, বুঝলেন? বাজে বকা বন্ধ করে চুপ করে বসুন।”
ভদ্রলোক আরও উত্তেজিত হয়ে বললেন, “আমি বাজে বকছি না; আসল কথা বলেছি বলে আপনার যে আঁতে ঘা লেগেছে সেটা আমি ভালোই বুঝতে পারছি।”
দু’জনের এই বাদানুবাদের মধ্যে বাসে উঠল নিত্যযাত্রী তনিমা। মানবকে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে তর্ক করতে দেখে কাছে গিয়ে বলল, “কী হয়েছে, মানব?”
মানব বলল, “আর বোলো না! আমি তোমার পাশে বসে যাতায়াত করি বলে ওনার রাগ।”
তনিমা বলল, “দেখুন দাদা, আমার স্বামী আমার পাশে বসলে আপনার অসুবিধাটা কোথায় বলুন তো?” তনিমার কথা শুনে ভদ্রলোক বাকরুদ্ধ হয়ে বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন ওদের দু’জনের দিকে।